Google Adsense -এ আয় বাড়ান ৩০০% পর্যন্ত!

আমাদের মধ্যে অনেকেরই ধারনা কোন রকমে অ্যাডসেন্স একাউন্ট করে ফেললেই শুধু টাকা আর টাকা আসতে থাকবে কিন্তু এমন ভাবনা একেবারেই ঠিক নয়। অ্যাডসেন্স থেকে মোটামুটি পরিমানে আয় করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বেশকিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে এবং সেভাবে শুরু থেকেই কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে, আর যেভাবে আগালে আপনি অ্যাডসেন্স থেকে ভাল পরিমানে আয় করতে পারেন। আমি প্রথম থেকেই এই বিষয়টির উপর অনেক অনেক সচেতন ছিলাম। তবে বিভিন্ন বিষয়ে এক্সপেরিয়েন্স এবং লেখার মানের উপরও নির্ভর করে অনেক কিছু। অ্যাডসেন্স রেভিনিউ বৃদ্ধি করতে আমি শুরু থেকেই বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করেছিলাম। কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো কাজ করেনি আবার কিছু ব্যপার আছে যা অনেক কাজ করেছিলো আমার জন্য। আজ আমি আপনাদের সাথে সেই বিষয়গুলো শেয়ার করবো।

কিওয়ার্ড রিসার্স করে টার্গেটেড পোষ্ট লিখাঃ
ভালো ব্লগাররা প্রতিটা পোষ্ট করার আগেই ইউজারের চাহিদা, ইণ্টেনশন এবং সে অনুযায়ী কিওয়ার্ড বাছাই এর সাথে সাথে ওই কিওয়ার্ডে কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট করলে কেমন পরিমাণ আয় করা সম্ভব সেগুলো ভেবে নেয়। প্রোফিটেবল কিওয়ার্ড বাছাই এবং কম্পিটেশন যাচাই এর সমষ্টি হচ্ছে কিওয়ার্ড রিসার্স, আর এটি অ্যাডসেন্স থেকে রেভিনিউ বৃদ্ধি করার অনেক বড় একটি বিষয়। আপনারা হয়তো জানেন যে প্রতিটি কিওয়ার্ড বা ফ্রেজের জন্য অ্যাডসেন্স এর এপ্রোক্স একটা রেট আছে যাকে CPC(Cost Per Click) বলে যা মূলত গুগলকে এডভার্টাইজারদের পে করতে হয়। গুগল বলে তারা মোট CPC এর ৬৮% (max) পাবলিশারদের পে করে। আর তাই পাবলিশারদের জন্য CPC নিয়ে ভাবা খুবি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় বলে বিবেচিত। এজন্য আমি আমার ব্লগে যে বিষয়গুলো নিয়ে লিখি সেসব বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত কিওয়ার্ডগুলো রিসার্স করতে থাকি যেগুলোর CPC মোটামুটি ভাল।

কিওয়ার্ড রিসার্সের জন্য ফ্রি Adwords Keyword Tool ব্যবহার করতে পারেন। কিওয়ার্ড রিসার্সের সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত সেগুলো হল, যে কিওয়ার্ডটি ব্যবহার করতে যাচ্ছেন সেটার মান্থলি সার্চ ভলিয়ুম কেমন, CPC কেমন, বিজ্ঞাপনদাতা আছে কিনা (এডওয়ার্ড কম্পিটেশনে হাইটাকে বাছাই করুন, কোন কোন ক্ষেত্রে মিডিয়াম নেয়া যেতে পারে) এবং কিওয়ার্ডটি লং টার্ম সার্চ হবে কিনা এছাড়াও বছরের সব সময়ই সার্চ হয় কিনা (গুগল ট্রেন্ডস দেখে নেয়া যেতে পারে) কিওয়ার্ড রিসার্স করে লিখলে ভিজিটরের সংখ্যাও বেড়ে যায়, ভিজিটর বাড়া মানে ক্লিক পরার চান্সও বেড়ে যাওয়া। সুতরাং টার্গেটেড কিওয়ার্ড বেসড করে পোষ্ট লিখুন দেখবেন অ্যাডসেন্স রেভিনিউ দ্রুত গতিতে বেড়ে যাচ্ছে।

অরিজিনাল ও কোয়ালিটি কন্টেন্ট লেখাঃ
অ্যাডসেন্স থেকে ভালো আয় করার প্রথম শর্তই হচ্ছে ভিজিটরের চাহিদা মাফিক আরিজিনাল এবং কোয়ালিটি সম্পন্ন কন্টেন্ট নিয়মিত ওয়েবসাইটে পাবলিশ করা। সেজন্য অবশ্যই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যেনো সাইটে কপিপেস্ট কন্টেন্ট না দেয়া হয়। কপিপেস্ট পোষ্ট লিখে অ্যাডসেন্স থেকে ভালো রেভিনিউ আনার কথা চিন্তা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা ছাড়া বিশেষ কিছুই না। কোয়ালিটি সম্পন্ন কন্টেন্টে হাইপেয়িং বিজ্ঞাপনদাতাদের এডস আসে, যারা ক্লিকের জন্য বেশ ভালো সিপিসি দিতে আগ্রহী থাকে। বুঝতেই পারছেন অরিজিনাল এবং কোয়ালিটি সম্পন্ন পোষ্ট লিখার গুরুত্ব কেমন। সুতরাং অ্যাডসেন্স রেভিনিউ বৃদ্ধি করতে এখন থেকেই চাহিদা মাফিক কপিপেস্ট বিহীন কোয়ালিটি পোষ্ট লিখায় মনোযোগ দিন।

ট্রাফিক বিল্ডিং বিশেষ করে এসইও তে জোর দেওয়াঃ




আমরা নিশ্চই জানি, যেকোন বিজনেস এর ক্ষেত্রেই ট্রাফিক=টাকা। ঠিক এক্ষেত্রেও যত বেশি ট্রাফিক তত বেশি আয় করার সুযোগ, যদি সঠিক ভাবে সাইটের অন্যান্য সম্পূরক বিষয় গুলো কাজে লাগানো যায় তবেই। আর তাই অ্যাডসেন্স কাজ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ট্রাফিক বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। জানতে হবে ট্রাফিক বাড়ানোর কৌশল গুলো বিশেষ করে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর এ টু জেড। কারন অ্যাডসেন্স মূলত সার্চ ইঞ্জিন থেকে আগত টার্গেটেড ট্রাফিকদের ক্লিককে বেশি প্রায়োরিটি দেয়, এতে আয় ভালো হয়। তাই অ্যাডসেন্স পাবলিশাররা এসইও নিয়েই বেশি মেতে থাকে। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ গুরত্ব দিতে হবে আপনাকে কারন সার্চ ইঞ্জিনে ভালো রেংক পেতে হলে পরোক্ষভাবে এটি হেল্প করে। আমরা কেউ কেউ হয়তো জানি কিছু দিন আগে গুগল সাইট রেংকিং করতে সোশ্যাল সিগন্যাল এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছে। সুতরাং এখন থেকে এসব ব্যাপারে সিরিয়াস হোন।

বিজ্ঞাপন চ্যানেল বসানো নিয়ে এক্সপেরিমেন্টঃ

অ্যাডসেন্স এর CPC অনেক অনেকাংশে বিজ্ঞাপণের সংখ্যা এবং বসানোর যায়গার উপর নির্ভর করে। যেমন পোস্ট এর শিরোনামের ঠিক নিয়ে বসানো বিজ্ঞাপনের CPC অন্যান্য যায়গার তুলনায় বেশি। এজন্য আমি পোস্টের শিরোনামের পরেই এডসেন্সের এর বিজ্ঞাপন বসাই এবং পোস্টের মাঝে বা শেষে একটি বিজ্ঞাপন বসাই, এক্ষেত্রে আমি আরো একটি বিষয় খেয়াল রাখি যেটি হচ্ছে কোন ফরমাটের বিজ্ঞাপনের CTR(Click Through Rate) কেমন। তবে অবশ্য গুগলে নতুন আপডেট এবভ দ্যা ফোল্ড এই বিষয়টি জানা জরুরী।

পোস্টের শুরুতে এবং শেষে Large Rectangle 336 x 280 বিজ্ঞাপন ইউনিট বসাতে পারে। কারন এই ফরম্যাট টির CTR(Click Through Rate) সবচাইতে বেশি আর আয়ও ভালো আসে। নিচে অ্যাডসেন্স এর বিজ্ঞাপন ফরম্যাটগুলোর সম্ভাব্য CTR(Click Through Rate) গুলো দেখানো হলঃ


পোস্টের শুরুতে এবং শেষে বিজ্ঞাপন বসানোর আরেকটি ভাল দিক হচ্ছে এখানে ক্লিক পড়ার সম্ভবনা অনেক বেশি। কারন অ্যাডসেন্স সবসময় পোস্ট সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে যারা ফলে পাঠকেরা পোস্ট পড়ার শুরু বিজ্ঞানের একেটি রিসোর্স পেতে পারে। আবার পোস্ট টা যদি পাঠকের চাহিদা মেটাতে সক্ষম না হয় তাহলে সে পোস্টের শেষে প্রদর্শিত বিজ্ঞানটিতে বিকল্প রিসোর্স হিসেবে ক্লিক করতে পারে। আরেকটি বিষয় যেটি আমি অবশ্যই করতে বলবো আপনাদের যেটি হচ্ছে বিজ্ঞাপন ইউনিট গুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড রঙ পেজ ব্যাকগ্রাউন্ড রঙের সাথে মিলিয়ে দিতে যাতে করে বিজ্ঞাপন গুলো যে আসলেই বিজ্ঞাপন সেটি পাঠকেরা সহজে বুঝতে না পারে, আরও তথ্য হিসাবে ব্রাউজ করবে।

যে বিষয়টি অনেকদিন থেকে খেয়াল করে আসছি সেটি হল, কোন মতেই যেন বিজ্ঞানপন ইউনিট এর সাথে পোস্টের ছবি গুলি লেগে না থাকে কারন এটি অ্যাডসেন্স এর নিয়ম ভংগ করে। আমি আমার ব্লগের সাইডবারে ও একটি বিজ্ঞাপন ইউনিট বসাই এতে ঐ বিজ্ঞাপন ইউনিটটি সবসময় ইম্প্রেসন পায়। আমি আমার সাইটের পেজে সর্বোচ্চ ৩ টা বিজ্ঞাপন ইউনিট ব্যবহার করি কারন অধিক বিজ্ঞাপন ইউনিট ব্যবহার করলে CTR(Click Through Rate) কমে যায় (পরীক্ষিত)। আমার কাছে অ্যাডসেন্স আর রেভিনিউ বৃদ্ধি করার জন্য বিজ্ঞাপন বসানোকে অনেক গুরুত্তপুর্ন মনে হয়েছে। আবার মাঝে মাঝে আমি অ্যাডসেন্সের এড বসানো নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করি। আপনিও করে দেখতে পারে, আশা করছি ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে।

ইরিলেভেন্ট বিজ্ঞাপনদাতাদের ব্লক করাঃ

রিলেভেন্ট এডস শো হওয়া মানেই হচ্ছে ভালো আর্নিং। অনেক ক্ষেত্রেই কন্টেন্ট কোয়ালিটি সম্পন্ন হওয়া স্বত্তেও অ্যাডসেন্সে ইরিলেভেন্ট এবং কম পে করে এমন এডস সাইটে শো করে। অ্যাডসেন্সের দারুন একটি ফিচার হচ্ছে ইরিলেভেন্ট বিজ্ঞাপন দাতাদের ব্লক করা। এটি খুবি কার্যকরী একটা অপশন। Keyword Tools, Spyfu বা KeywordSpy জাতীয় টুল দিয়ে কম পরিমান পরিশোধ করে এমন বিজ্ঞাপনদাতাদের খুঁজে বের করা যায় এবং সাইটে প্রদর্শিত পূর্বের এডস গুলো পর্যবেক্ষন করেই আমরা ইরিলেভেন্ট এডভার্টাইজার ডিটেক্ট করতে পারি। তারপর এদেরকে অ্যাডসেন্স ড্যাসবোর্ড থেকে > Allow and block ads > Blocking Options > Advertisers URL গিয়ে ব্লক করা যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন চ্যানেল তৈরি
বিজ্ঞাপন চ্যানেলও গুরুত্তপুর্ন একটি বিষয়। আমি প্রতিটা বিজ্ঞাপন ইউনিটের জন্য আলাদা করে চ্যানেল তৈরি করি যাতে করে আমি বুঝতে পারি কোন বিজ্ঞাপন ইউনিট থেকে আমার কেমন আয় হচ্ছে এবং সেটা কোনটা বা কোন পেজ থেকে। এভাবে আমি যেই বিজ্ঞাপন ইউনিট এবং যে পোস্ট থেকে ভাল আয় হচ্ছে যেটার উপর বেশি নজর দেই।

অন্যান্য বিষয়ঃ
অ্যাডসেন্স থেকে আয় করার গুরুত্তপুর্ন বিষয় হল পেজ ভিউ বারানো, ভিজিটরকে সাইটে বেশি সময় ধরে রাখা। আমি পেজ ভিউ বাড়ানোর জন্য অনেক কাজ করি যেমন যখন নতুন একটি পোস্ট করি তখন ঐ পোস্ট সম্পর্কিত অন্য পোস্ট গুলি ইন্টারনাল লিঙ্ক করে এবং পোস্টের নিচে রিলেটেড পোস্ট দেখাই এতে করে ভিজিটররা একটা পোস্ট থেকে অন্য পোস্ট যায় যার ফলে পেজ ভিউ বৃদ্ধি পায় সাথে সাথে CTR(Click Through Rate) ও বৃদ্ধি পায়। আরেকটা বিষয় আমি প্রথম থেকেই গুরুত্ত দিতাম সেটি হল অ্যাডসেন্স এর নিয়ম নীতি। কারন অ্যাডসেন্স এর নিয়ম অনুসরন না করলে অচিরেই আপনার অ্যাডসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। আমি অ্যাডসেন্স এ যে বিষয়গুলো হাইলাইট করা হয়েছে সেগুলি মেনে কাজ করতে থাকি। এখান থেকে আপনি অ্যাডসেন্স এর নিয়ম গুলো দেখে নিতে পারেন AdSense program policies. এছাড়াও আপনারা ছোট ছোট নিশ বেসড সাইট নিয়ে আগাতে পারেন যার সাফল্যের হার খুব ভালো হয়। তবে গুগলের ই.এম.ডি আপডেট এর ব্যপারে সাবধান হয়ে এগুতে হবে।

উপরে আলোচিত ১০ টি বিষয়ই প্রত্যেক অ্যাডসেন্স পাবলিশারদের জানতেই হবে।

No comments:

Post a Comment